পাথরাজ সরকারি কলেজ পঞ্চগড় জেলাধীন বোদা উপজেলার পৌরসদরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি বর্গের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অনেক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে জমি-জমা দান করেন এবং বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হলেও অনিবার্য কারণে এটি সে সময়ে ধারাবাহিক ভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। অতঃপর অত্র এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে ২২ জুন ১৯৮৪ ইং তারিখ এক সাধারণ সভার মাধ্যমে ০১/০৭/১৯৮৪ ইং তারিখ হতে পাথরাজ মহাবিদ্যালয়টি পুনরায় স্থাপন করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।
সূচনা কালে প্রতিষ্ঠানটি ক্লাস শুরু হয় বোদা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বর্তমান অবস্থানে প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব লাভ করে। যাদের অকৃত্রিম ত্যাগ,আন্তরিক প্রচেষ্টা ও বদান্যতায় এ এলাকার মানুষের লালিত স্বপ্ন- ‘পাথরাজ মহাবিদ্যালয়' নামে বাস্তবে রূপ নেয় ও উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মোচিত হয়-তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বর্গীয় নিতাই চাঁদ সরকার এবং মরহুম ইজার আলী চৌধুরী। সংগঠক হিসেবে যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন- জনাব আনোয়ার হোসেন আবু, জনাব লুৎফর রহমান, জনাব এ.কে.এম বোরহানউদ্দীন, জনাব প্রফেসর মিজানুর রহমান, জনাব অ্যাডভোকেট সফিউর রহমান, সাবেক উপাধ্যক্ষ জনাব তরিকুল আলম, জনাব ইমতিয়াজ হোসেন মির্জা, জনাব আলহাজ্জ্ব জামিলুর রহমান, জনাব শামসুল আলম, জনাব আমির হোসেন বাবু, জনাব রেজাউল করিম প্রধান রঞ্জু। এছাড়াও এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন দান, অনুদান, পরামর্শ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণযোগ্য। তাঁদের সকলের নাম এই ক্ষুদ্র পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব হলো না । মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ ।
দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ১৯৭২ সালে বাবু নিতাই চাঁদ সরকার এবং তাঁর পরিবার বর্গ সাতখামার মৌজায় ১.৬৮ একর জমি দান করে এবং ১৯৮৫ সালে জনাব ইজার আলী চৌধুরী এবং তাঁর পরিবারবর্গ মোসলেমপুর মৌজায় ১.০১ একর জমি দান করে । তাছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে পাথরাজ মহাবিদ্যালয়ের নামে জমি-জমা নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করা হয়। দান পত্র ও ক্রয়কৃত দলিলমূলে পাথরাজ সরকারি কলেজের জমির পরিমাণ ৮.৩৬ একর মাত্র। ৬.৬৮ একর জমির উপর পাথরাজ মহাবিদ্যালয় ভৌত অবকাঠামো অবস্থিত।
০১/০৭/১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মঞ্জুরি প্রাপ্ত হয় এবং ১৯৮৫-১৯৮৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১-১৯৯২ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক (পাস) পর্যায়ে কলা, বি.কম এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের মঞ্জুরী লাভ করে ।
১৯৯২-১৯৯৩ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.এস.সি (পাস) মঞ্জুরী লাভ করে। উল্লেখ্য যে, পঞ্চগড় জেলায় সর্বপ্রথম পাথরাজ মহাবিদ্যালয়ে বি.এস.সি (পাস) কোর্স চালু হয়- যা সেই সময়ে স্নাতক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পঞ্চগড় জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার বিজ্ঞান শিক্ষার অভাব পূরণ করে, যার সুনাম আজও বিদ্যমান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি অনেক শিক্ষার্থী এই মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করছে এবং তাদের মধ্যে অনেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। এই মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক পর্যায়ে মেধা তালিকায় জাতীয়ভাবে ৩য়, ৭ম ও ১৬ তম স্থান দখলের কৃতিত্ব রয়েছে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে জাতীয়ভাবে সাফল্যের নজির আছে ।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার-এ তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে একটি কলেজ ও একটি স্কুল জাতীয়করণ অভিপ্রায় থাকার প্রেক্ষিতে পাথরাজ কলেজটি ৮/০৮/২০১৮ খ্রিঃ সরকারিকরণ করা হয় ।